১. ধোঁকা থাকবে না
২. অন্যের ক্রয়-বিক্রয় চলাকালে
পাশ থেকে দামদস্তর না করা
৩. ব্যবসায় সততা
৪. শপথ না করা
৫. দান-সদকা করা
৬. বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া
৭. ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতা
উত্তম চরিত্র ও সুন্দর আচরণ মানুষকে
সুসজ্জিত করে। মানুষের সঙ্গে লেনদেনে
উত্তম আচরণ করা ইসলামের অন্যতম
সৌন্দর্য, বিশেষত ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে
গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা-বাণিজ্যকে অর্থনীতির
মূল মেরুদণ্ড বলা হয়। শরিয়ত এই
ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু শিষ্টাচার দিয়েছে।
একজন মুসলমান ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
এসব শিষ্টাচার মেনে চলবে। তখন তার
ব্যবসায় আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত হবে।
১. ধোঁকা থাকবে না-
বিক্রেতা কিংবা কাউকে ধোঁকা দেওয়া যাবে
না। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে
জানাল যে ক্রয়-বিক্রয়ে সে প্রতারিত হয়।
তখন তিনি বললেন, তুমি যার সঙ্গে
কেনাচেনা করবে তাকে বলে দিয়ো
কোনো প্রকার ধোঁকা থাকবে না।
এর পর থেকে যখন সে কিছু ক্রয় করত,
তখন বলে দিত—কোনো প্রকার ধোঁকা
থাকবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৮৫)
২. অন্যের ক্রয়-বিক্রয় চলাকালে
পাশ থেকে দামদস্তর না করা-
কেউ কোনো পণ্য ক্রয় করার জন্য
দামদস্তর চলছে, সে সময়ে অন্য কোনো
ব্যক্তি এসে তার থেকে আরো বেশি মূল্য
দিয়ে ওই জিনিসের দামদর করা নিষেধ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে
শহরবাসী কর্তৃক বিক্রয় করা থেকে নিষেধ
করেছেন এবং বলেছেন, তোমরা কোন
প্রকার প্রতারণামূলক দালালি করবে না।
যেখানে ক্রেতাকে ন্যায্য মুল্যের থেকেও
দ্বিগুন বা তিনগুন দাম দিতে হবে।
কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের
প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব না দেয়।
কোনো মহিলা যেন তার বোনের
(সতিনের) তালাকের দাবি না করে,
যাতে সে তার পাত্রে যা কিছু আছে,
তা নিজেই নিয়ে নেয়।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০৭)
৩. ব্যবসায় সততা-
শুধু ব্যবসায়ই নয়, সততা আপনাকে
সকল প্রকার হারাম কার্যক্রম থেকে
হেফাজত করবে। তবে ব্যবসার মধ্যে
সততার বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
ব্যবসায় সততা বলতে, বিক্রেতা তার
পণ্যের গুণ ও মান ঠিক যা আছে তাই
বলবে। বাড়িয়ে-কমিয়ে বলবে না।
কোনো রকম চাতুর্যের আশ্রয় নেবে না।
অনেক বিক্রেতা মনে করে একটু চালাক
না হলে ব্যবসা করা যাবে না।
তাই তাদের নিয়মিত অভ্যাস দুই নম্বর
মালকে এক নম্বর বলে চালিয়ে দেওয়া।
এক কম্পানির মাল অন্য কম্পানির নামে
বিক্রি করা। এ ধরনের আরো বিভিন্ন
গরমিল কথা বলা। আর যে বিক্রেতা এ
ধরনের গরমিল কথা না বলে, তার পণ্য
ঠিক যা তাই বলে, সে তার বিক্রয়ে
সত্যবাদী। হাদিসের ভাষ্যমতে, বিক্রিতে
বরকত লাভের জন্য সত্যবাদী হওয়া শর্ত।
তাই পণ্যের মধ্যে দোষত্রুটি থাকলে তা
প্রকাশ করে দেওয়া বিক্রেতার কর্তব্য।
যদি পণ্যটি পুরনো হয় তা বলে দেওয়া
যে এটি পুরনো। কোনো ভেজাল মেশানো
থাকলে বলে দেওয়া যে এর ভেতর এই
ভেজাল আছে। পণ্যে কোনো ধরনের
খুত থাকলে তাও জানিয়ে দেওয়া যে,
এই স্থানে খুত আছে আপনি ভালোভাবে
বুঝে দেখুন। এগুলো ব্যবসার সততার অংশ।
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী (সাঃ) বলেছেন,
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী-
নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)
৪. শপথ না করা-
অনেকের অভ্যাস ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রেতাকে
বিশ্বাস করানোর জন্য শপথ করা।
যদি শপথ মিথ্যা হয়ে থাকে তাহলে তো
এটা মারাত্মক গুনাহ। আর যদি শপথ সঠিক
হয়ে থাকে তাও এটা অনুচিত। আবু হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি,
‘মিথ্যা শপথ পণ্য চালু করে দেয় বটে,
কিন্তু বরকত নিশ্চিহ্ন করে দেয়।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)
৫. দান-সদকা করা-
দান-সদকা সবার জন্যই কল্যাণকর।
তবে ব্যবসায়ীদের বিশ্বনবী (সাঃ)
বিশেষভাবে দান-সদকা করার কথা
বলেছেন। কায়স ইবনে আবি গারাজা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন,‘হে ব্যবসায়ী সমাজ, ব্যবসার
ক্ষেত্রে শয়তান ও পাপ এসে সমুপস্থিত হয়।
সুতরাং তোমরা তোমাদেরই ব্যবসায়ে সদকা
জড়িত করো।’
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৮)
৬. বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া-
ক্রেতা ও বিক্রেতা তাদের ক্রয়-বিক্রয়
সম্পন্ন করার পর অনেক সময় বিক্রেতার
কোনো প্রয়োজনের কারণে সে যদি
বিক্রি ভঙ্গ করতে চায় অথবা ক্রেতার
কোনো সমস্যার কারণে সেই ক্রয় চুক্তি
ভঙ্গ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে শরিয়ত এর
জন্য বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছে।
অর্থাৎ তাদের চুক্তি পরিপূর্ণ হয়ে গেছে;
কিন্তু এর পরও যদি পরস্পর পরস্পরের
সমস্যার প্রতি লক্ষ রেখে তাদের সেই চুক্তি
ভঙ্গ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে
কিয়ামতের দিন পুরস্কার দান করবেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো
মুসলমানের সঙ্গে ইকালা করে,তথা যদি
কেউ কোনো জিনিস বিক্রি করে, এরপর
কোনো কারণবশত বিক্রেতা তা ফেরত চায়
এবং ক্রেতা তা খুশিমনে ফেরত দেয়
এ ধরনের বেচাকেনাকে ‘ইকালা’ বলা হয়,
আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪২৪)
৭. ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতা-
নম্রতা সব সময় সুন্দর। শরিয়ত ক্রয়
বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নম্রতা ও সদ্ব্যবহার করার
আদেশ দিয়েছে। বেচাকেনার সময়
পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য না হয়,
এ জন্য নম্রতা অবলম্বনের কথা বলা
হয়েছে। হাদিসে এসেছে, যারা ক্রয়-বিক্রয়ে
নম্রতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাআলা
তাদের প্রতি রহম করবেন। একটু চিন্তা
করুন তো, যদি আমি আমার এই
ব্যবসা-বাণিজ্যে নম্রতা অবলম্বন করি
তাহলে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং আমার প্রতি
দয়া করবেন, এটি আমার জন্য কত বড়
নিয়ামত। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমরা তো
কোনো কিছুই করতে পারব না। কিন্তু
ব্যবসা-বাণিজ্যে একটু সতর্কতা আমার
জীবন আল্লাহর রহমতে ঢেকে থাকতে
পারে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় ও পাওনা আদায়ে
নম্র ব্যবহার করে, আল্লাহ তাআলা তার
ওপর রহম করেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৪৬)
মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যবসা লাভজনক করুন, আমিন।
Share This News